বাংলা রচনা : ডিজিটাল বাংলাদেশ
ডিজিটাল বাংলাদেশ |
ডিজিটাল বাংলাদেশ
[ সংকেত : ভূমিকা; ডিজিটাল বাংলাদেশ; ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বরূপ; ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য; ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি; ভিশন ২০২১ রূপকল্প; প্রত্যাশা ও বাস্তবতা; ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতাসমূহ; ডিজিটাল বাংলাদেশের সতর্কতা; উপসংহার। ]ভূমিকা : গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘােষণা একটি সময়ােপযােগী প্রগতিশীল পদক্ষেপ। গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়ন বলতে বােঝায় বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও পরিবেশের তাত্ত্বিক ও প্রায়ােগিক দৃষ্টিকোণ থেকে একই দিকে উত্তরণ । আর সেই বৈশ্বিক উত্তরণের প্রেক্ষাপটে, তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে । বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক অঙ্গনে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ধারণা একটি উল্লেখযােগ্য সংযােজন। জলবায়ুর তা পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্বপ্রেক্ষাপট । পৃথিবী ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রে। চলতে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত হচ্ছে বিজ্ঞানের নতুন নতুন পদ্ধতি, উন্মােচিত হচ্ছে অত্যাধুনিক সভ্যতার নব দিগন্ত। তত্ত্ব-সত্য, তথ্যউপাত্ত সরবরাহে মানুষের জীবন এখন সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর । সেই নির্ভরতার প্রেক্ষিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ অথবা, ভিশন - ২০২১ এদেশের মানুষের একটি প্রত্যয়দীপ্ত চেতনাশীল জাগ্রত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টায় নানা কর্মকৌশল নির্ধারণ ও তার প্রয়োেগ ইতােমধ্যে শুরু হয়েছে। তাই এমন স্বর্ণযুগের ভাগ্যবান নাগরিক হিসেবে আমাদের। প্রত্যাশা তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়ােগ ও অগ্রগতিতে সমগ্র বিশ্বের কাছে একদিন বাংলাদেশ হবে একটি রােল মডেল।
ডিজিটাল বাংলাদেশ : ল্যাটিন Digitus শব্দ থেকে ডিজিটাল শব্দটির উৎপত্তি, যার বাংলা প্রতিশব্দ ০ থেকে ৯ পর্যন্ত যেকোনাে সংখ্যা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্থ বিজ্ঞান বিকশিত তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বিশেষ করে এখানে এনালগের বিপরীতার্থক। ডিজিটালকে ভাবার্থে নির্দেশ করা হয়েছে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ হলাে সনাতন পদ্ধতিকে পরিহার করে সর্বক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা এবং তার ব্যবহার উচ্চস্তর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া। একটি সুখী, সমৃদ্ধ, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বৈষম্যহীন জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করতে, সর্বোপরি একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন অত্যাবশ্যক । বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রচারণার অংশ হিসেবে তার নির্বাচনি ইশতেহার ঘােষণা করে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তার। নির্বাচনি ইশতেহারে ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগােষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন ও প্রবৃদ্ধিশীল অর্থনীতি, সবমিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজগঠন— এই স্বপ্নই দেখিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সােনার বাংলার প্রতিরূপ। ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘােষণা জনগণের মনে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। ২০০৯ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি অনড় থেকে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সকল ক্ষেত্রে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বরূপ : বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে বােঝায় দেশে প্রযুক্তির সর্ব ব্যবহার নিশ্চিত করা। অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ হলাে ইলেকট্রনিক বাংলাদেশ। মূলত এটা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা বর্তমান সময়ের একটি অনিবার্য চাহিদা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বরূপ : বস্তুত ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে বােঝায় দেশে প্রযুক্তির সর্ব ব্যবহার নিশ্চিত করা। অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশ হলাে ইলেকট্রনিক বাংলাদেশ। মূলত এটা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা বর্তমান সময়ের একটি অনিবার্য চাহিদা।
আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হবে। একবিংশ শতাব্দীতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইলেকট্রনিক সংসদ আমরা দেখতে পাই, যে সংসদ জটিল কোনাে মুহূর্তে আইন প্রণয়নে ইলেক্ট্রনিক গণভােটের সহায়তায় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। সুপারমার্কেটে যাওয়া ব্যতীতই ইলেক্ট্রনিক শপিং-এর মাধ্যমে ৫০% ভােক্তাদের বাড়িতে পণ্য পৌঁছে যায়। তাছাড়া বিদ্যুৎ বিল পরিশােধ, কলেজ-ইউনির্ভাসিটিতে ভর্তি, জমিসংক্রান্ত কাগজপত্রসহ যাবতীয় তথ্য ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়নে ইউনিয়নে কমিউনিটি সেন্টারের মতাে তথ্য সরবরাহ সেন্টার খুলে জনসাধারণকে প্রযুক্তিগত সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সবচেয়ে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে ব্যাংকের লেনদেন এবং মানি ট্রান্সফারের বিষয়ে। এক্ষেত্রে মােবাইল কোম্পানিগুলাে সব জটিল বিষয়কে সহজ করে জনগণের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন নিরক্ষর সাধারণ মানুষও প্রযুক্তির সমানাধিকার ভােগ করছে। সর্বস্তরের জনগণের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যই হলাে ভিশন-২০২১। প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প । এটি বাংলাদেশের মতাে দরিদ্র দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য মাথাপিছু আয় বা জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ানাের সুদৃঢ় অঙ্গীকার । এটি হলাে দেশকে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সােনার বাংলায় পরিণত করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য: কার্যত এদেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কার্যপদ্ধতি, শিল্প, বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাসহ সমাজের সকল স্তরের সকল কাজকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হলাে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য। এক কথায় ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হলাে সার্বিকভাবে সুশিক্ষিত, স্বনির্ভর ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। যেহেতু অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, স্বাস্থ্যহীনতা, পুষ্টিহীনতা, দুর্নীতি প্রভৃতি এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজমান। সেহেতু এসব বাধার শিকড় উপড়ে ফেলে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হলাে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি : ভিশন ২০২১ গড়ার লক্ষ্যে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তার মধ্যে প্রথম পদক্ষেপই হলাে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি । কেননা, ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের প্রাণশক্তি হলাে বিদ্যুৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যানুযায়ী প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল শিক্ষার্থীকে কম্পিউটারভিত্তিক পাঠদান করা হচ্ছে। স্বল্পমূল্যে দেশের দুর্গম অঞ্চলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ইন্টারনেটের সুযােগ সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তুকি বৃদ্ধি করাসহ প্রযুক্তিগত কৃষি যন্ত্রপাতির সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কৃষি ঋণের পরিমাণ বাড়ানাে হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার মানােন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর হার কমানাের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। যােগাযােগের অবকাঠামােগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। রেল যােগাযােগ বর্ধিত করাসহ সম্প্রতি পদ্মাসেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলাের সঙ্গে ট্রান্স-এশিয়ান স্কিম-এর অধীনে রেল ও সড়ক যােগাযােগ স্থাপনের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করতে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে পরিচিত করতে ২০২১ সালের মধ্যে একটা শক্ত ভিত্তি স্থাপন করা হবে এবং দেশীয় মােট উৎপাদনে শিল্প সেক্টরের অবদান দ্বিগুণ করা হবে।
ভিশন ২০২১ রূপকল্প : ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ২০২১ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিসাব কৃষিতে ২২%, শিল্পে ২৮%, সেবাখাতে ৫০%-এর পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫%, ৪০% এবং ৪৫%। ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০% থেকে ১৫% নেমে আসবে। কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮% থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০%। ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৪৫% থেকে ১৫% নামবে। ২০২১ সালে গড় আয়ুষ্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত হবে। শিশু মৃত্যুর হার ৫৪% থেকে ১৫%-এ নামিয়ে আনা হবে। সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তােলা হবে।
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা : একটি দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরের মানে হলাে তাকে ই-স্টেটে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি পরিচালনায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে মােবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ই-লার্নিং, ই-গভর্নেন্স-প্রভূতির সমন্বিত প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে । নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য প্রয়ােজন ফাইবার অপটিকস ক্যাবলকে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। আর এটা সম্ভব ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে । ই-গভর্নেন্স চালু করা হলে দুনীতির ফাঁকফোকর অনেকাংশে কমে আসবে। দেশের শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযােগ পাবে। মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। দূরত্বকে জয় করে মানুষের দোরগােড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রয়ােজন ই-গভর্নেন্স ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতাসমূহ : ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে আধুনিক সােনার বাংলা। থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হরতাল, বােমাবাজি, পাচার, দখল, নারী নির্যাতন। কিন্তু এরূপ স্বপ্নীল বাংলাদেশ গড়ার পদে পদে রয়েছে অসংখ্য বাধা। আর্থিক দীনতা, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, পেশিশক্তির দৌরাত্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বিদ্যুতের অভাব, যাতায়াত ও যােগাযােগের অভাব প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা সে পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছে। এছাড়া জনগণের সদিচ্ছার অভাব, আত্মকেন্দ্রিক মনােভাব এবং গভীর দেশপ্রেমের অভাবও এ পথকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ডিজিটাল
বাংলাদেশের সতর্কতা : ডিজিটালাইজেশনকে বিকেন্দ্রীকরণের অর্থে না দেখলে ফাইবার অপটিকস দিয়ে বাংলাদেশ ঘিরে ফেললেও লাভ হবে না। বিকেন্দ্রীকরণ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের পথে প্রথম সােপান । শিশুদের ৯/১০ বছরের আগে প্রযুক্তি ব্যবহারে যত কম অভ্যস্ত করানাে যায় ততই মঙ্গল। এর চেয়ে বেশি তাকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই জরুরি। কারণ, প্রকৃতি থেকে দূরে রেখে ফার্মের মুরগির মতাে ছােটোবেলা থেকে কম্পিউটারে আসক্ত করে তুললে তার মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার আশঙ্কাই বেশি। ডিজিটাল হলাে একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা কীভাবে চলবে তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন মানুষকেই করতে হবে, যন্ত্র নিজে করবে না। সমাজবিদ, মনােবিদ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সমন্বয়ে এমনভাবে পরিকল্পনাটি করতে হবে, যাতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলাে কাটিয়ে আমরা নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যেতে পারি ।
উপসংহার : বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও কনফারেন্স, ফাইবার অপটিকস ক্যাবল মানুষের দূরত্বের অবস্থানকে কাছের করে দিয়েছে। ইউনিয়ন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রগুলােতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে যুগােপযােগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব । সরকার ও জনগণের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার অবশ্যই বাস্তবে রূপলাভ করবে জাতি এগিয়ে যাবে । ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে পাব বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব।
প্রত্যাশা ও বাস্তবতা : একটি দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরের মানে হলাে তাকে ই-স্টেটে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি পরিচালনায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে মােবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ই-লার্নিং, ই-গভর্নেন্স-প্রভূতির সমন্বিত প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে । নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য প্রয়ােজন ফাইবার অপটিকস ক্যাবলকে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। আর এটা সম্ভব ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে । ই-গভর্নেন্স চালু করা হলে দুনীতির ফাঁকফোকর অনেকাংশে কমে আসবে। দেশের শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযােগ পাবে। মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। দূরত্বকে জয় করে মানুষের দোরগােড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রয়ােজন ই-গভর্নেন্স ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতাসমূহ : ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে আধুনিক সােনার বাংলা। থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হরতাল, বােমাবাজি, পাচার, দখল, নারী নির্যাতন। কিন্তু এরূপ স্বপ্নীল বাংলাদেশ গড়ার পদে পদে রয়েছে অসংখ্য বাধা। আর্থিক দীনতা, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, পেশিশক্তির দৌরাত্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বিদ্যুতের অভাব, যাতায়াত ও যােগাযােগের অভাব প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা সে পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছে। এছাড়া জনগণের সদিচ্ছার অভাব, আত্মকেন্দ্রিক মনােভাব এবং গভীর দেশপ্রেমের অভাবও এ পথকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ডিজিটাল
বাংলাদেশের সতর্কতা : ডিজিটালাইজেশনকে বিকেন্দ্রীকরণের অর্থে না দেখলে ফাইবার অপটিকস দিয়ে বাংলাদেশ ঘিরে ফেললেও লাভ হবে না। বিকেন্দ্রীকরণ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের পথে প্রথম সােপান । শিশুদের ৯/১০ বছরের আগে প্রযুক্তি ব্যবহারে যত কম অভ্যস্ত করানাে যায় ততই মঙ্গল। এর চেয়ে বেশি তাকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই জরুরি। কারণ, প্রকৃতি থেকে দূরে রেখে ফার্মের মুরগির মতাে ছােটোবেলা থেকে কম্পিউটারে আসক্ত করে তুললে তার মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার আশঙ্কাই বেশি। ডিজিটাল হলাে একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা কীভাবে চলবে তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন মানুষকেই করতে হবে, যন্ত্র নিজে করবে না। সমাজবিদ, মনােবিদ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সমন্বয়ে এমনভাবে পরিকল্পনাটি করতে হবে, যাতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলাে কাটিয়ে আমরা নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যেতে পারি ।
উপসংহার : বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও কনফারেন্স, ফাইবার অপটিকস ক্যাবল মানুষের দূরত্বের অবস্থানকে কাছের করে দিয়েছে। ইউনিয়ন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রগুলােতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে যুগােপযােগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব । সরকার ও জনগণের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার অবশ্যই বাস্তবে রূপলাভ করবে জাতি এগিয়ে যাবে । ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে পাব বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব।