বাংলা রচনা : পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ |
পহেলা বৈশাখ ও বাংলাদেশ।
অথবা, বাংলা নববর্ষ
অথবা, পহেলা বৈশাখ।
[ সংকেত : ভমিকা; বাংলা সনের জনা ও নববর্ষের সচনা; পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব; বর্ষবরণ; বাংলা নববষে বাঙালির প্রচলিত রাতি; বাংলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠান; বৈশাখী মেলা; হালখাতা; পূণ্যাহ; শুভেচ্ছা উপহার; নগরজীবনে নববষ; নববষে প্রকৃতিতে বৈচিত্র্য; উপসংহার । ]ভূমিকা : পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন । বিগত বছরের শেষ সূর্যাস্তের পর একটি রাতের অপেক্ষা মাত্র। তারপর পূর্বাকাশে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় । বিগত বছরের দুঃখ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আনন্দ-বিরহ মিশ্রিত দিনগুলাে পিছনে ফেলে সামনে আবার সুদিনের সন্ধান পাওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হবে । বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন বা পহেলা। বৈশাখ উদযাপন বাঙালির আচার-অনুষ্ঠানসমূহের মধ্যে অগ্রগণ্য। বাংলা নববর্ষ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির যৌথ উৎসব।
বাংলা সনের জন্ম ও নববর্ষের সূচনা : বাংলাদেশের তথা বাঙালি জাতির জন্ম ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকার সভ্যতা, সংস্কৃতি, লােকাচার, উৎসব, পার্বণ সবই কৃষিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে । বাংলা সনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে বিভিন্ন উৎসব চালু আছে। এসব উৎসবের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের জন্মকথা । মােগল সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে সফল সম্রাট হলেন আকবর। রাজকার্য সম্পাদনে হিজরি সাল নিয়ে কিঞ্চিৎ অসুবিধার সৃষ্টি হলে তিনি বঙ্গদেশ বা সুবে বাঙ্গালার জন্য পৃথকভাবে বাংলা সন সৃষ্টির নির্দেশ দেন। এই সন প্রবর্তনের নির্দেশ দেন কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার দিকে লক্ষ রেখে । তৎকালীন সময়ে বাঙালি কৃষকের ঘরে ফসল তােলার মাস অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসকে বাংলা সনের প্রথম মাস ধরা হতাে। তখন অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে বাঙালিরা নববর্ষের উৎসবে মেতে উঠত । রাজসভার নবরত্নের বাইরে দশম রত্ন আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজিকে বাংলা সন আবিষ্কারের দায়িত্ব দেন সম্রাট আকবর । সে অনুযায়ী ফতেহউল্লাহ সিরাজি কৃষিনির্ভর বাংলায় রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি নীতি নির্ধারণ করেন । এ নীতিতে বলা ছিল, মাঠে বীজ বপনের প্রথম থেকে বছরের শুরু হবে এবং ফসল ওঠা শেষ হলে বর্ষের সমাপ্তি ঘটবে । এ নীতির প্রয়ােগ অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ থেকে তিরিশে চৈত্র পর্যন্ত বাংলা সন চালু করা হয়। বাংলার কৃষকেরা পহেলা বৈশাখে রাজস্ব পরিশােধ করলে হাতে অনেক সময় পাবে । এজন্য ফতেহউল্লাহ সিরাজি প্রবর্তিত নীতি সানন্দে গ্রহণ করে কৃষকেরা উল্লাসে মেতে উঠেছিল । প্রচলিত হিজরি চান্দ্র সন এবং বাংলা সৌর সনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সম্রাটের রাজজ্যোতিষী মহাপণ্ডিত আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজি বাংলা সনের উদ্ভাবন করেন। সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরােহণের সময় থেকে অর্থাৎ ১৬ মার্চ, ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন অর্থাৎ বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। আর তখন থেকেই মানুষ বাংলা নববর্ষে তাদের হিসাব-নিকাশ, দেনা পরিশােধ, খাজনা পরিশােধ ও বিভিন্ন প্রকার লেনদেন সম্পাদন করে আসছে।
পহেলা বৈশাখের গুরুত্ব : বাংলা সন চালু হওয়া বাঙালির জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা । পহেলা বৈশাখ বছরের প্রথম দিন হওয়াটাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাঙালির কর্মপ্রবাহে বাংলা নববর্ষের বিপুল প্রভাব রয়েছে। বাঙালির জীবনযাত্রা, উৎসব-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণ, ব্যবসায়-বাণিজ্যের শুভ হালখাতা, খাজনা দেওয়া, দৈনন্দিন কাজকর্ম, বাংলা সনের দিন-তারিখ তিথি-নক্ষত্র অনুসারে করা হয় । বাংলা বারাে মাসের কথা আমরা কিছুটা হলেও ভুলতে বসেছি। দৈনন্দিন কাজকর্মে আমরা খ্রিষ্টীয় সাল ব্যবহার করছি। খ্রিষ্টীয় সাল যতই আমরা ব্যবহার করি না কেন বাংলা সনের প্রয়ােজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা এখনাে বাংলা সনের গুরুত্বকে অস্বীকার করছি না। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ১৬ই ডিসেম্বর যেমন আমাদের স্মরণীয় দিন তেমনি আমরা ভুলে যাইনি। পহেলা বৈশাখ, ২৫শে বৈশাখ ও ১১ই জ্যৈষ্ঠের কথা ।
বর্ষবরণ : বাঙালি আজ বাংলা বর্ষবরণে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয়। বাঙালি আজ কেবল গ্রামে-গঞ্জে নয়; শহরে, বন্দরে, রাজধানীতে বাংলা সন, পহেলা বৈশাখ ও নববর্ষ নিয়ে সাংস্কৃতিক উৎসবে মেতে ওঠে । চারুকলা ইনস্টিটিউট-এর ছাত্রছাত্রীরা লােকজ চিত্রকলা একে লােকজ সাজে হাতি, ঘােড়ার মুখােশ তৈরি করে বৈশাখী র্যালিতে অংশ নিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে । ভাের থেকে রমনার বটমূলে রবীন্দ্র সংগীতের মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখের সূর্যতপ্ত সকালে রমনার আশেপাশে বাতাস ভেদ করে বাঙালির মর্মস্পর্শ করে কবিগুরুর আহ্বান—
এসাে হে বৈশাখ, এসাে এসাে
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ।
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ।
যারা সারাবছর পাঞ্জাবি-পাজামা পরেন না, পহেলা বৈশাখে তারাও পাঞ্জাবি পাজামা পরেন। মহিলারা পরেন শাড়ি। সেই সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে সাজসজ্জা করেন।
বাংলা নববর্ষে বাঙালির প্রচলিত রীতি : কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই বাংলা নববর্ষ অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। চৈত্র মাসের শেষ রাতে বাড়ির গৃহিণীরা বেশি করে ভাত রান্না করে পানি দিয়ে রাখে। সকালে সেই পান্তা ভাতের সাথে বড়াে মাছ, কাঁচা মরিচ, পেয়াজ ও বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে পরিবারের সকলকে খেতে দেওয়া হয়। বিশেষ করে পান্তা আর ইলিশ মাছ খাওয়া নববর্ষের ঐতিহ্য হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এটি শুরু হয়েছে বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে। ইদানীং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এর আয়ােজন থাকে। এ পান্তা ভাতের স্বাদ এমন অমৃত তুল্য যে, আজকের নববর্ষের দিনেও তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নববর্ষের দিনে প্রতিটি ঘরে ঘরে আরও নানা রকম খাবারের আয়ােজন থাকে। সকলের ধারণা এ দিনে ভালাে খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করলে সারাবছরই ভালােভাবে কাটবে । শুধু গ্রামেই নয়, শহরের লােকেরাও এ দিনে নানা খাবারের আয়ােজন করে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করে ।
বাংলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠান : বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পৃক্ত একটি আনন্দময় দিন। এ দিনকে সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিবছর পালন করে থাকে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও পালন করা হয়। যেমন- বৈশাখী মেলা, হালখাতা, পুণ্যাহ- এগুলাে নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাঙালির সর্বজনীন অনুষ্ঠান ।
বৈশাখী মেলা : পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য মেলা হলাে বৈশাখী মেলা। এ মেলায় মৃৎ ও কুটির শিল্পজাত পণ্যাদির কেনা-বেচা হয়। বিভিন্ন পেশার লােকেরা তাদের উৎপাদিত সামগ্রী মেলায় এনে বিক্রি করে। যেমন— ডালা, কুলা, চালুনি, বেলুন-পিড়ি, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র, কাঠের জিনিসপত্র ও বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। তাছাড়া নাগরদোলা, বায়ােস্কোপ, লটারি, জাদু প্রদর্শন, পুতুল নাচ ইত্যাদি আয়ােজনে মেলার স্থান সরগরম থাকে। তবে বৈশাখী মেলায় মানুষের প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন মিষ্টিদ্রব্যের প্রতি। নানান মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসে মেলা। আর আগত ক্রেতারা কম-বেশি সবাই এ মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরে।
হালখাতা : বাংলা নববর্ষের সাথে কেবল সংস্কৃতিই নয়, আর্থনীতিক দিকটিও জড়িত । পহেলা বৈশাখ ব্যবসায়ী মহলের হালখাতার দিন। এই হালখাতার তাৎপর্য অনেকটা আর্থনীতিক লেনদেন । সারাবছরের যত বকেয়া থাকে তা হিসাব-নিকাশ করে পুরাতন হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের নতুন খাতা খােলেন ব্যবসায়ীরা । পুরাতন বছরের পাওনা আদায়ের জন্য ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানানাে হয় । ব্যবসায়ীদের দোকান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানাে হয়। আর বৈশাখের সকাল থেকেই ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানাে হয় ।
পূণ্যাহ : ‘পুণ্যাহ’ পহেলা বৈশাখের আরেকটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি শুধু জমিদার মহলেই প্রচলিত ছিল। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ায় অনুষ্ঠানটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে গ্রামবাংলার কিছু কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনাে প্রাচীন জমিদার বংশের উত্তরাধিকারীরা নববর্ষে গ্রামবাসীদের আপ্যায়ন করে পুণ্যাহকে স্মরণ করে । মূলত পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে পাওনা খাজনা আদায় করত। প্রজাদের আপ্যায়নের জন্য জমিদার কাছারিতে সেদিন পান ও মিষ্টির আয়ােজন করা হতাে।
শুভেচ্ছা উপহার : পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। আজকাল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি হয়। বিভিন্ন রঙের কালিতে হাতে আঁকা শুভেচ্ছা কার্ডও পাওয়া যায় । নববর্ষের শুভেচ্ছা হিসেবে অনেকে আবার প্রিয়জনকে বই উপহার দিয়ে থাকেন ।
বাংলা নববর্ষে বাঙালির প্রচলিত রীতি : কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরেই বাংলা নববর্ষ অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। চৈত্র মাসের শেষ রাতে বাড়ির গৃহিণীরা বেশি করে ভাত রান্না করে পানি দিয়ে রাখে। সকালে সেই পান্তা ভাতের সাথে বড়াে মাছ, কাঁচা মরিচ, পেয়াজ ও বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে পরিবারের সকলকে খেতে দেওয়া হয়। বিশেষ করে পান্তা আর ইলিশ মাছ খাওয়া নববর্ষের ঐতিহ্য হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এটি শুরু হয়েছে বিগত শতাব্দীর আশির দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে। ইদানীং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এর আয়ােজন থাকে। এ পান্তা ভাতের স্বাদ এমন অমৃত তুল্য যে, আজকের নববর্ষের দিনেও তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও নববর্ষের দিনে প্রতিটি ঘরে ঘরে আরও নানা রকম খাবারের আয়ােজন থাকে। সকলের ধারণা এ দিনে ভালাে খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু করলে সারাবছরই ভালােভাবে কাটবে । শুধু গ্রামেই নয়, শহরের লােকেরাও এ দিনে নানা খাবারের আয়ােজন করে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করে ।
বাংলা নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠান : বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পৃক্ত একটি আনন্দময় দিন। এ দিনকে সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিবছর পালন করে থাকে। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও পালন করা হয়। যেমন- বৈশাখী মেলা, হালখাতা, পুণ্যাহ- এগুলাে নববর্ষ উপলক্ষ্যে বাঙালির সর্বজনীন অনুষ্ঠান ।
বৈশাখী মেলা : পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য মেলা হলাে বৈশাখী মেলা। এ মেলায় মৃৎ ও কুটির শিল্পজাত পণ্যাদির কেনা-বেচা হয়। বিভিন্ন পেশার লােকেরা তাদের উৎপাদিত সামগ্রী মেলায় এনে বিক্রি করে। যেমন— ডালা, কুলা, চালুনি, বেলুন-পিড়ি, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র, কাঠের জিনিসপত্র ও বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। তাছাড়া নাগরদোলা, বায়ােস্কোপ, লটারি, জাদু প্রদর্শন, পুতুল নাচ ইত্যাদি আয়ােজনে মেলার স্থান সরগরম থাকে। তবে বৈশাখী মেলায় মানুষের প্রধান আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন মিষ্টিদ্রব্যের প্রতি। নানান মিষ্টির পসরা সাজিয়ে বসে মেলা। আর আগত ক্রেতারা কম-বেশি সবাই এ মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরে।
হালখাতা : বাংলা নববর্ষের সাথে কেবল সংস্কৃতিই নয়, আর্থনীতিক দিকটিও জড়িত । পহেলা বৈশাখ ব্যবসায়ী মহলের হালখাতার দিন। এই হালখাতার তাৎপর্য অনেকটা আর্থনীতিক লেনদেন । সারাবছরের যত বকেয়া থাকে তা হিসাব-নিকাশ করে পুরাতন হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন বছরের নতুন খাতা খােলেন ব্যবসায়ীরা । পুরাতন বছরের পাওনা আদায়ের জন্য ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানানাে হয় । ব্যবসায়ীদের দোকান ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানাে হয়। আর বৈশাখের সকাল থেকেই ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানাে হয় ।
পূণ্যাহ : ‘পুণ্যাহ’ পহেলা বৈশাখের আরেকটি সর্বজনীন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি শুধু জমিদার মহলেই প্রচলিত ছিল। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হওয়ায় অনুষ্ঠানটিও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে গ্রামবাংলার কিছু কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনাে প্রাচীন জমিদার বংশের উত্তরাধিকারীরা নববর্ষে গ্রামবাসীদের আপ্যায়ন করে পুণ্যাহকে স্মরণ করে । মূলত পুণ্যাহ অনুষ্ঠানে জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে পাওনা খাজনা আদায় করত। প্রজাদের আপ্যায়নের জন্য জমিদার কাছারিতে সেদিন পান ও মিষ্টির আয়ােজন করা হতাে।
শুভেচ্ছা উপহার : পহেলা বৈশাখে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। আজকাল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের শুভেচ্ছা কার্ড বিক্রি হয়। বিভিন্ন রঙের কালিতে হাতে আঁকা শুভেচ্ছা কার্ডও পাওয়া যায় । নববর্ষের শুভেচ্ছা হিসেবে অনেকে আবার প্রিয়জনকে বই উপহার দিয়ে থাকেন ।
নগরজীবনে নববর্ষ : বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ নগর-মহানগরগুলােতে নতুন প্রাণের বারতা নিয়ে আসে। নগরীর প্রায় প্রতিটি ঘরে পান্তা ইলিশ ও বিভিন্ন খাবারের আয়ােজন করা হয়ে থাকে। গ্রামের চেয়েও নগরের লােকেরা নববর্ষকে জমকালােভাবে উদ্যাপন করে । মহিলারা প্রায় সবাই বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে আর পুরুষেরা পরে পাঞ্জাবি-পাজামা। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ করে ।
নববর্ষে প্রকতিতে বৈচিত্র্য : বাংলা নববর্ষ প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনেরই ধারাবাহিক ইঙ্গিত বহন করে। একেক ঋতুতে আমাদের প্রকতির একেক রূপ ধারণ করে । বৈশাখ মাসে চারদিকে খাঁ খাঁ রােদ। মাঠ-ঘাট পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে। যায়। এমন অনেক ফসলের জমি রয়েছে, যেখানে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বৈশাখ মাসের বৃষ্টির জন্যই মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় । বৈশাখ মাসে ঝড়-বৃষ্টির প্রচণ্ড তাণ্ডব চলে । দুরন্ত ঝড়ে সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়। তাই গ্রামের মানুষ কাচা বা আধা-পাকা ঘরবাড়ি মেরামত করে । বৈশাখ মাস ফলের মৌসুম, আম-কাঠালের মৌসুম। প্রকৃতিতে দেখা যায় সুবজের সমারােহ। এ সময়ে কৃষকেরা মাঠে বপন করে ধান, শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলমূলের বীজ। আর গাছে গাছে পাখ-পাখালির কলরবে চারদিক মুখরিত থাকে ।
নববর্ষে প্রকতিতে বৈচিত্র্য : বাংলা নববর্ষ প্রকৃতপক্ষে আমাদের প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনেরই ধারাবাহিক ইঙ্গিত বহন করে। একেক ঋতুতে আমাদের প্রকতির একেক রূপ ধারণ করে । বৈশাখ মাসে চারদিকে খাঁ খাঁ রােদ। মাঠ-ঘাট পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে। যায়। এমন অনেক ফসলের জমি রয়েছে, যেখানে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে বৈশাখ মাসের বৃষ্টির জন্যই মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় । বৈশাখ মাসে ঝড়-বৃষ্টির প্রচণ্ড তাণ্ডব চলে । দুরন্ত ঝড়ে সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়। তাই গ্রামের মানুষ কাচা বা আধা-পাকা ঘরবাড়ি মেরামত করে । বৈশাখ মাস ফলের মৌসুম, আম-কাঠালের মৌসুম। প্রকৃতিতে দেখা যায় সুবজের সমারােহ। এ সময়ে কৃষকেরা মাঠে বপন করে ধান, শাকসবজি ও বিভিন্ন ফলমূলের বীজ। আর গাছে গাছে পাখ-পাখালির কলরবে চারদিক মুখরিত থাকে ।
উপসংহার : নববর্ষ মানুষকে নব উদ্যমে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। মানুষ এ দিনে পুরাতন বছরের যত ব্যর্থতা, গ্লানি সব মুছে ফেলে নতুন জীবনের সফলতা কামনা করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির মনে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলার প্রেরণা যােগায়।
খুব ভালো লেগেছে লেখাটা।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম । আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন ।
ভালো হয়েছে লেখাটা