|
অনুচ্ছেদ রচনা : কলেজের শেষ দিন |
কলেজের শেষ দিন
৪ঠা নভেম্বর, দিনটি আমার কলেজ জীবনের শেষ দিন। দিনটি আজও আমার স্মৃতিপটে অমলিন হয়ে আছে । খুব ভােরে উঠে রাস্তায় বের হলাম একটু হাঁটতে। দেখা হলাে বন্ধু জুয়েলের সঙ্গে। দুজনের মনটা আজ কেমন জানি হয়ে গেল । দেখতে দেখতে কলেজের দু’বছর কখন কেটে গেল আমরা যেন বুঝে উঠতে পারিনি। মনে পড়ে গেল পুরানাে দিনের কথা। কলেজে পরীক্ষার ফিস জমা দেওয়ার নােটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেইনি। এ নিয়ে ভয় পেয়েছিলাম আমরা। তবুও আমরা পরামর্শ করলাম সব বন্ধুবান্ধবী মিলে একসঙ্গে কলেজে যাব । একটা বড়াে ধরনের অপরাধ করে ফেলেছি ভেবে আমরা সবাই বিষন্ন মনে কলেজ চত্বরে প্রবেশ করলাম। সকলেরই ভয় করছিল হয়ত অধ্যক্ষ স্যার বেশ বকাঝকা দেবেন। কিন্তু না, তেমন কিছু নয়; বরং স্যার আমাদের সকলকে চমকে দিলেন। তিনি আমাদের জন্য প্রথম বর্ষের ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে ছােটোখাটো একটি বিদায়-অনুষ্ঠানের আয়ােজন করেছেন । সেজন্য গফুর ভাই আমাদের কলেজের নৈশ প্রহরী— সকলের বাড়িতে গিয়ে দুদিন আগেই পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এ ধরনের একটি আয়ােজনের কথা আমরা মােটেই টের পাইনি । তখন বেলা ১১টা, স্যার আমাদের সকলকে ডেকে মুদ্রিত আবেদনপত্রের ফরম দেওয়ায় জন্য রবিন ভাইকে বললেন এবং প্রয়ােজনীয় দিক-নির্দেশনা দিলেন । সম্ভবত তখন ১টা বেজে গেছে। কলেজের সবচেয়ে বড়াে কক্ষে সারি সারি বেঞ্চে তখন আমরা বসলাম । সামনে আমাদের প্রিয় স্যারেরা বসে আছেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হলাে। প্রথম বর্ষের ছাত্র তুহিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হলাে । বিদায়ী ছাত্র/ছাত্রীদের পক্ষ থেকে কিছু বলার জন্য জুয়েল দাঁড়াল; কিন্তু তেমন কথা বলতে পারল না। বাংলা বিভাগের আমাদের প্রিয় শফি স্যার বলতে শুরু করলেন। কীভাবে উত্তর লিখলে অধিক নম্বর পাওয়া যায়, আবার নানা বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিলেন, এবং তিনি স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আমাদের সফলতার ওপরই নির্ভর করছে কলেজের পুরাে সুনাম। এবার অধ্যক্ষ স্যারের পালা, তিনি চমৎকারভাবে তার ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা মিশিয়ে আমাদেরকে বােঝালেন- পরীক্ষার হলে যেন মনােবল হারিয়ে না ফেলি এবং সবশেষে আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সফলতা কামনা করে তিনি অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানলেন। আমরা সবাই আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের পা ছুঁয়ে দোয়া নিলাম । আমাদের জন্য ইতােমধ্যেই অধ্যক্ষ স্যার আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন । ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে এক আন্তরিক পরিবেশে তা গ্রহণ করলাম। কে জানত আমাদের বিদায়ের এ পর্বটি এত মধুময় হবে? কিন্তু কলেজ থেকে বের হতেই গফুর ভাই দৌড়ে এলেন, আমার হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। সেই মুহূর্তে আমাদের সকলের চোখে জল এসেছিল । কলেজে শেষ দিনের সেই মধুর স্মৃতি আমাদের সকলের মনে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।