|
শিক্ষা সফর |
অনুচ্ছেদ রচনা : শিক্ষা সফর
জ্ঞান লাভের জন্য দুটি মাধ্যম উল্লেখযােগ্য। একটি হলাে গ্রন্থপাঠ, অন্যটি শিক্ষা সফর। বই পড়ে তত্ত্বগত জ্ঞান লাভ করা যায় কিন্তু বাস্তব জগতের জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা সফর একান্ত প্রয়ােজন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিষয়ে পাঠদান করা হলেও জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক বিষয়ই পাঠ্যপুস্তুকে পাওয়া যায় না। তাই পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জনের জন্য পাঠ্যপুস্তকের সম্পূরক হিসাবে। শিক্ষা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকালে যখন বই-পুস্তক সহজলভ্য ছিল না তখন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিমাত্রই শিক্ষা সফরে বেরিয়ে পড়তেন। শুধু শিক্ষা সফরের মধ্য দিয়ে তাঁরা অতীত আর বর্তমানের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে তুলে জ্ঞানের তৃষ্ণা মিটিয়েছেন। ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণ কাহিনিতে যথার্থই উল্লেখ করেছেন 'Travelling makes one know the maystery of lords creation. Travelling makes us self confident.' পুথিগত বিদ্যার বাইরে বিশাল জগৎ অচেনা থেকে যায় । তাই কেতাবি বিদ্যার চর্বিতচর্বণের বাইরে চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষা সফর বিকল্পহীন। যদিও বই-পুস্তকের ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আবদ্ধ । সুতরাং এ ক্ষুদ্র পরিসরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার রাখিবন্ধন স্থাপনের কাজটি শিক্ষা সফরের মাধ্যমেই করা সম্ভব । ইতিহাস পাঠে আমরা হাজারাে বিষয় সম্বন্ধে জানতে পারি। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, আগ্নেয়গিরি প্রভৃতি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানার্জন শিক্ষা সফর ব্যতীত সম্ভব নয়। সােনারগাঁও, ময়নামতি, পাহাড়পুর, সুন্দরবন সম্বন্ধে আমাদের ধারণা তখনই পরিষ্কার হবে যখন তা শিক্ষা সফরের মধ্য দিয়ে মানসপটে স্থায়ী আসন করে নেবে। তাই তাে শিক্ষাব্যবস্থায় এখন অনেকটা পরিবর্তন এনে ভাষাবিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাচীন ভাষাগুলাের লিপি, ভাষার বিবর্তনের ধারা; ভূগােল-শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন দেশের মাটি, শিলা, পাথর; প্রাণিবিজ্ঞানের জন্য প্রাচীন ফসিল; চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন জীবজন্তু, ফোকলােরের শিক্ষার্থীর জন্য গ্রামগঞ্জের লােকছড়া, লােককাহিনি, প্রবাদ-প্রবচন, লােকসংগীত প্রভৃতি সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। শুধু শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার বিষয়টিকে আবদ্ধ রাখা হয়নি বলে এগুলাে সম্পর্কে পুরােপুরি জানতে প্রয়ােজন পড়েছে ব্যাপকভিত্তিক মাঠ-সমীক্ষার । আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি রাঙামাটি, সিলেটের চা বাগান, তামাবিল, জাফলং, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক, যমুনা সেতু, অন্যদিকে পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার, সত্য পীরের ভিটা, কুমিল্লার ময়নামতি, ঢাকার আহসান মুঞ্জিল, ঢাকেশ্বরী মন্দির, সােনারগাঁ লােকশিল্প জাদুঘর, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি, বগুড়ার মহাস্থানগড় প্রভৃতি ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতার আকর হিসাবে পরিগণিত হয়। কেবল শিক্ষা সফরের মাধ্যমেই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আহরণ সম্ভব । উন্নত বিশ্বে অনেক আগে থেকেই শিক্ষার একটি প্রধান অঙ্গ হিসাবে শিক্ষা সফরকে বিবেচনা করা হলেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এ বিষয় চরমভাবে উপেক্ষিত। এর কারণ হিসাবে শিক্ষাব্যবস্থায় অপ্রতুল বাজেট প্রদান, রাজনৈতিক স্থিরতার অভাবসহ বহুবিধ কারণ জড়িত। তবে সময়ের পালাবদলে আমাদের শিক্ষা কাঠামােকে ঢেলে, সাজিয়ে শিক্ষা সফরকে শিক্ষার এক অনবদ্য অঙ্গ হিসাবে গ্রহণ করতে হবে ।