অনুচ্ছেদ রচনা : ভূমিকম্প

অনুচ্ছেদ রচনা : ভূমিকম্প
অনুচ্ছেদ রচনা : ভূমিকম্প 

ভূমিকম্প 

ভূমিকম্প এক মহা প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম । সহজ কথায় পৃথিবীর কেঁপে ওঠাই হলাে ভূমিকম্প । বিজ্ঞানীদের মতে ভূ-অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমির কম্পন হয়। অর্থাৎ পৃথিবী-পৃষ্ঠের অংশবিশেষের হঠাৎ অবস্থান। পরিবর্তন বা আন্দোলনই ভূমিকম্প। পৃথিবীতে বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয় । এগুলাের অধিকাংশই মৃদু, ফলে আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয় : প্রচণ্ড, মাঝরি ও মৃদু । উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিনভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প । ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলােমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলােমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলােমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসাবে চিহ্নিত করা হয় । তবে। ভূমিকম্প কোন কারণে সৃষ্টি হয় বিষয়টি গবেষকদের কাছে এখনও ধোয়াচ্ছন্ন । অনেকের মতে ভূ-অভ্যন্তরে স্থিত গ্যাস যখন ভূপৃষ্ঠের ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন ভূমিকম্প হতে পারে। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের তিনটি কারণ পাওয়া গিয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তনজনিত কারণ, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়া ও শিলাচ্যুতি। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ আলােচনার বিষয়। কেননা, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীতে ঘটতে পারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব নির্ণায়ক যন্ত্র রিখটার স্কেলে এ মহাধ্বংসযজ্ঞের সামান্য কিছু অনুমান করা যায় মাত্র । 

রিখটার স্কেলে এ এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর অধিক হলে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে। ভূমিকম্পের নির্মমতা পৃথিবীর সকলকে চরমভাবে আন্দোলিত করে। যুগে যুগে তাই ভূমিকম্প নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জনশ্রুতি কিংবা লােককাহিনি। গ্রিক জাতির ধারণা ভূমিকম্পের জন্য দেবতা পােসাডেন দায়ী। পশ্চিম আফ্রিকার লােকবিশ্বাস যে একজন দৈত্য তার মাথার ওপর সমস্ত পৃথিবী ধরে আছে। মাঝে মধ্যে দৈত্যটি মাথা ঘােরালে ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পপ্রবণ জাপানের লােকজনের অনুরূপ বিশ্বাস যে তাদের নামাজু' নামের মাছের সঙ্গে স্বর্গীয় কোনাে শক্তির যােগাযােগে ভূমিকম্প হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এ বিষয়ে মজার কাহিনি প্রচলিত আছে। তাদের ধারণা পৃথিবী। দাঁড়িয়ে আছে চারটি বিশালাকৃতি হাতির ওপর। সেগুলাে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিশাল কচ্ছপের ওপর। কচ্ছপটি দাঁড়িয়ে আছে একটি মহিষের দুটি শিংয়ের ওপর । এদের মধ্যে কোনাে প্রাণীর পা চুলকালে তারা নড়েচড়ে ওঠে, ফলে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয় । এরূপ নানা জনশ্রুতি বাংলাদেশেও বিদ্যমান। ভৌগােলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে ইতােমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে। বাংলাদেশ এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিগত শতাধিক বছরে বেশ কয়েকটি প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প হয়েছে। এদের মধ্যে চারটির রিটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৮। গত এক দশকে দেশে ২০১টি ভূমিকম্পের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এগুলাের মধ্যে ১৯৯৭-তে চট্টগ্রামে ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে । রিটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬.৬। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের মতে ঢাকায় ৭৫% লােক এবং ৮০% বিল্ডিং ভূমিকম্পে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ভূ-কম্পনের এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে পাওয়া যায়, বাংলাদেশের ৪৩% এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে, ৪১% মধ্যম এবং ১৬% এলাকা নিম্নমাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ভাের ৫টা ৭ মিনিটে বাংলাদেশে যে ভূমিকম্পটি ঘটে তার | রিটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৬। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মনিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল । আতঙ্কিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে । অলৌকিকভাবে এ যাত্রায় বাংলাদেশ এক বড়াে ভয়াবহতার হাত থেকে বেঁচে যায় । কিন্তু ২০০৫ সালে পাকিস্তানঅধ্যুষিত কাশ্মীরে এক ভয়ংকর ভূমিকম্পে নিহত হয় ৭৫ হাজার মানুষ । সম্প্রতি ২০১৫ সালে নেপালে ৯ হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু এবং বিশাল ধ্বংসলীলা সূচিত হয়, যা আমাদের জন্য এক অশনিসংকেত । পৃথিবীতে ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি এখনাে মানুষের আয়ত্তের বাইরে। সেক্ষেত্রে আমাদের মতাে অসহায় দেশে স্রষ্টার কৃপা প্রার্থনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই । তদুপরি দুর্যোগসহিষ্ণু জাতি হিসাবে ভূমিকম্পের ক্ষতি মােকাবিলার জন্য রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, দালান-কোঠা নির্মাণে কোড অনুসরণ, জনসচেতনতা সৃষ্টি, সর্বোপরি অদম্য মনােবলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url