কোন একটি বইমেলা তোমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই বইমেলার কথা উল্লেখ করে একটি দিনলিপি লেখ
কোন একটি বইমেলা তোমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই বইমেলার কথা উল্লেখ করে একটি দিনলিপি লেখ |
কোন একটি বইমেলা তোমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই বইমেলার কথা উল্লেখ করে একটি দিনলিপি লেখ
বইমেলায় একদিন
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৭
রাত ১০টা ৩০ মিনিট
ফেব্রুয়ারি বাংলার ইতিহাসে এক গৌরবােজ্জ্বল মাস। তাই এ মাসের পুরােটা সময় ধরেই বইমেলা হয়। আমিও মেলা শুরুর থেকেই ভাবছি বইমেলায় যাব । কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সময় ও সুযােগ করে উঠতে পারছিলাম না । তাই আজ এই মহান ভাষাদিবসে আমার বন্ধু অর্ণবকে সঙ্গে নিয়ে বইমেলার উদ্দেশে যাত্রা করলাম। বইমেলায় প্রবেশের ফটকগুলােতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়, তবুও লাইন ধরে প্রায় মিনিট দশেক পর আমরা প্রবেশ করতে পারলাম । বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে চলছে নতুন নতুন লেখকদের প্রকাশনা উৎসব। কিন্তু কেন জানি ক্ষুধাটা বেড়ে গেল, তাই কিছু খেয়ে নিব ভাবছিলাম। আজ এত মানুষের সমাগম হয়েছে যে এখান থেকে বের হতে হলে আবার ভিড়ের পাহাড় অতিক্রম করতে হবে । অর্ণব বলল ‘ওর দরকার নেই বরং এর ভেতর থেকে কিছু খেয়ে নিলেই তাে হবে। কিছুদূর এগিয়ে দেখলাম বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে; তবে গ্লাসের সংখ্যা মানুষের তুলনায় অনেক কম। পাশে পৌছাতেই একজন ভদ্রলােক তার পানিভর্তি বােতলটি আমার দিকে দিতেই ধন্যবাদ বলে প্রায় অর্ধেক বােতল পানি পান করলাম। ভাবলাম দ্রলােকের সৌজন্যবােধ রয়েছে। শুধু আমাকে নয় এরূপ অনেকজনকে তিনি বােতল ভর্তি করে পানি দিচ্ছেন। যাক সে কথা, আমরা এবার যখন ওখান থেকে ফিরে এসে লেখককুঞ্জের দিকে অগ্রসর হলাম দেখলাম সাদা চুলে পাঞ্জাবি পরে ঔপন্যাসিক আনিসুল হক বের হয়ে আসছেন। আমরা তাকে দেখে খুবই আনন্দিত হলাম এবং অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে বললাম যে, আমরা শিশুদের উন্নয়নে কিছু করতে চাই এ ব্যাপারে আপনি আমাদের কিছু উপদেশ দিন । আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা তাঁকে জানালাম । তিনি হাসি দিয়ে আমাদের জড়িয়ে ধরলেন; লেখক-সাহিত্যিকদের এই মনখােলা হাসি, সত্যি আমরা অভিভূত। আমাদের পরিকল্পনা শুনে বললেন, ‘পত্রিকা অফিসের নিয়ম অনুযায়ী আমি কোনাে সংগঠন/সংস্থার উপদেষ্টা হতে পারব না। তবে পত্রিকার ফিচারটি তােমাদের কাজে লাগবে। আমরা দেখলাম ‘অচ্যুত সামন্ত’ নামে ভারতের একজন ব্যক্তি প্রথম জীবনে একটি স্কুল করতে গিয়ে কত বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। স্কুল চালাতে ব্যর্থ হয়ে মাঝেমধ্যে তিনি আত্মহত্যার মতাে পথও বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত। ভারতের একটি ব্যাংক তাকে ত্রিশ লক্ষ টাকা লােন দেয় এবং সেখান থেকেই তাঁর ঘুরে দাঁড়ানাে । আজ তিনি শুধু ভারতের নয় বরং বাংলাদেশের শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চান। ফিচার পড়ে আমরা অভিভূত হলাম। আসলে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেকোনাে। ভালাে কাজ সম্পন্ন হয়। ফিচারটি আমাদের অনুপ্রেরণা উৎসভূমি হিসাবেই কাজ করবে । বিদায় নিতেই তিনি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে। দিলেন। তার অফিসে চায়ের আমন্ত্রণ জানালেন। এই গুণী ব্যক্তির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বইমেলা থেকে কিছু বই কিনে। খুশি মনে বাড়ি ফিরে আসলাম। সারাটা দিন বেশ ভালােই কাটল।