পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ভ্রমণের ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি রচনা কর
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ভ্রমণের ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি রচনা কর |
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ভ্রমণের ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি রচনা কর।
মনােরম সুন্দরবন
১৪.০৩.২০১৭
প্রাকৃতিক সােন্দর্যের এক অপরুপ লীলাভূমি সন্দরবন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর উপকসু ২ সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পিরােজপুর জেলাজুড়ে অবিস্থত। UNESCO ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব প্রাকতিক ঐতিহ্য হিসাবে ঘােষণা দেয়। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলােকনের এক অপূর্ব সুযােগ আমার হলাে গত মার্চ মাসে । আমরা কলেজের পাচজন বন্ধু সুন্দরবন দর্শনের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম খুলনার উদ্দেশে। প্রায় ছয় ঘণ্টা বাস ভ্রমণ শেষে আমরা খুলনায় পৌছালাম ১৪ মার্চ বিকেল ৪ টায় । অচেনা শহরে একটু ঘােরাঘুরি হলাে হােটেল খােজার জন্য। অবশেষে আমরা একটা মাঝারি গােছের হােটেলে উঠলাম। ততক্ষণে রাত ৮টা বেজে গেল। একটা রেস্টরেন্ট থেকে আমরা রাতের আহার শেষ করলাম। তারপর দ্রুত হােটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
১৫.০৩.২০১৭
সুন্দরবন ভ্রমণের উত্তেজনায় খুব সকালেই আমাদের ঘুম ভাঙল। এরপর দ্রুত নাশতা সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। সকাল ৮টায় আমরা রূপসা নদীর তীরে গেলাম এবং একটি স্পিডবােট ভাড়া করলাম। দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে আমরা পাঁচজন এবং একজন চালক স্পিডবােটে উঠে বসলাম। শুরু হলাে স্বপ্নের সুন্দরবন যাত্রা। স্পিডবােট এগিয়ে চলছিল আর বন্ধু তপুর ফটোগ্রাফিও চলছিল সাথে সাথে । বেলা ১২টার দিকে আমরা সুন্দরবনের একাংশে এসে পৌছালাম। সুন্দরবনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটি বড়াে খাল চলে গেছে বনের ভিতর দিয়ে । বন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আমরা ওই খালের মাঝ বরাবর বনের মধ্যে প্রবেশ করলাম । স্পিডবােটের চালকই ছিল আমাদের গাইড । এই সময় নদীতে ছিল পূর্ণ জোয়ার। বনের অধিকাংশ জায়গা পানিতে প্লাবিত। শান্ত পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির, রৌদ্রের আলাে-ছায়ার খেলা এর মধ্যে হঠাৎ দেখলাম কিছু হরিণ দূরে চরে বেড়াচ্ছে। তারপর দেখা মিলল কিছু বানর ও কিছু অপূর্ব সুন্দর পাখির ।
দেখতে দেখতে কখন বেলা ২টা বেজে গেল আমাদের কারুরই খেয়াল ছিল না। পেটের ক্ষুধা অনুভব করেই আমরা বুঝতে পারলাম। দুপুরের খাবারের সময় প্রায় অতিক্রান্ত । দ্রুত স্পিডবােটে বসেই সেরে নিলাম আমাদের সেদিনের দুপুরের খাবার। খাওয়া শেষে শুরু হলাে পড়ন্ত বিকেলের সুন্দরবন দর্শন । সুন্দরি, গেওয়া, কেওড়া, গরান, গােলপাতা ইত্যাদি বৃক্ষ স্বচক্ষে দর্শনের এক বিরল অভিজ্ঞতা হলাে আমাদের। অবশেষে সন্ধ্যা নেমে এলাে, পাখির কলকাকলি ক্রমান্বয়ে কমে আসছিল এবং আমরা খুলনার উদ্দেশে আমাদের ফিরতি ভ্রমণ শুরু করলাম। সন্ধ্যা ৭টায় আমরা হােটেলে ফিরলাম ।
১৬.০৩.২০১৭
গতরাতে যে কয়টায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। সকাল ৯টায় আমাদের ঘুম ভাঙল । তারপর নাশতা সেরে ঢাকার উদ্দেশে বাসে রওয়ানা হলাম । বিকাল ৪টায় শ্যামলীতে পৌছাল আমাদের বাস। অতঃপর আমরা বাসায় ফিরে গেলাম। সুন্দরবনের সেই পশুপাখি, বৃক্ষরাজি, গহীন অরণ্য, আলাে-ছায়ার মিতালি ইত্যাদি আমাদের হৃদয়ের পর্দায় প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান হচ্ছে।