বাংলা রচনা : কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা

কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা
কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা

কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা
অথবা, কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব
অথবা, কম্পিউটার : আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়
অথবা, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে কম্পিউটার
অথবা, আধুনিক যুগে কম্পিউটার

[সংকেত : ভূমিকা; কম্পিউটার; কম্পিউটার আবিষ্কার; কম্পিউটারের কাঠামাে; কম্পিউটারের ব্যবহার; বাংলাদেশে কম্পিউটার; উপসংহার।] 

ভূমিকা : মানব কল্যাণে যে সকল বিস্ময়কর অবদান রয়েছে সেগুলাের মধ্যে কম্পিউটার । এতে দ্রুত উন্নয়নের সীমাহীন উপযােগিতা রয়েছে। এর সমস্যা সমাধানের ব্যাপকতা এবং এ ধরনের বহুগুণ কর্মক্ষমতা কম্পিউটারকে আজকের দিনে করেছে মানুষের কার্যক্রমের নিত্যসঙ্গী। মানব জীবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে শুরু করে মহাশূন্যে গবেষণার কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার এখন। অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। অফিস, আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবখানেই কম্পিউরকে কাজে লাগিয়ে মানব জীবনকে অত্যন্ত সুখকর করে তােলা হয়েছে। এরই সাথে কম্পিউটার আজকের জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে।

কম্পিউটার : কম্পিউটার একটি আধুনিক ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র । এ যন্ত্রটি ডাটা গ্রহণ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অতি দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। কম্পিউটার একটি তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার যন্ত্রও বটে। এটি তথ্য গ্রহণ, তথ্য নির্দেশ এবং তথ্য সংরক্ষণ করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে অগণিত জটিল সমস্যা সমাধান নির্দেশ করতে পারে। তাই এটা একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র । এর কাজকর্ম বিচিত্রমুখী। হিসেবের যন্ত্র হিসেবে কম্পিউটার যােগ, বিয়ােগ, গুণ, ভাগ, সাজিয়ে জটিল অঙ্কের সমাধান করতে পারে। তার বিস্ময়কর ক্ষমতা আছে তথ্যাদির বিশ্লেষণে। তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত প্রদান করার কাজও কম্পিউটার করে থাকে। তার সংযােগ আছে গণিত, যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজের সাথে । এর কাঠামােতে আছে ট্রানজিস্টার সার্কিট । আরও আছে টাইপ রাইটার, লাইন প্রিন্টার, কার্ড রিডার, কার্ড পাঞ্চিং মেশিন, ম্যাগনেটিক টেপ ইত্যাদি। এসবের যথার্থ সংযােগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার একটি বিচিত্র রূপের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। 

কম্পিউটার আবিষ্কার : মানব সমাজে এখন কম্পিউটার ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। জনপ্রিয়তা পেলেও কম্পিউটারের বর্তমান। রূপ পরিগ্রহ করতে বেশ সময়ের প্রয়ােজন হয়েছে।

 ১৬৪২ সালে গণিতবিদ কেইলি প্যাসকেল যােগ, বিয়ােগ করতে সক্ষম এমন একটি গণনা যন্ত্র তৈরি করেন । 
১৬৭১ সালে গডফ্রাইড লেবনিউজ গুণ ও ভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর যন্ত্র তৈরি করেন। 
১৮১২ সালে চার্লস্ ব্যাবেজ প্রথম আধুনিক ক্যালকুলেটরের মূলনীতি পরিকল্পনা করেন। 
১৯৪৪ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওআইবিএম কোম্পানি যৌথ উদ্যোগে ইলেকট্রিক মেকানিক্যাল কম্পিউটার তৈরি করেন। 
১৯৫৭ সালের পর কম্পিউটার যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। 
১৯৭১ সালের পর থেকে কম্পিউটার জগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এরপর থেকে বর্তমান জগতকে কম্পিউটার দখল করে নেয় ।

কম্পিউটারের কাঠামাে : কম্পিউটারের দুটো প্রধান দিক আছে। (ক) যান্ত্রিক ও (খ) প্রােগ্রাম। কম্পিউটারের যান্ত্রিক দিকটিকে বলা হয় হার্ডওয়্যার এবং প্রােগ্রামটিকে বলে সফটওয়্যার। তথ্য গ্রহণের জন্য প্রবেশ মুখ ব্যবহার করার পর অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহার হয় গাণিতিক অংশ। তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় স্মৃতি। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত । যান্ত্রিক অংশগুলাে কার্যকর হয়ে উঠতে প্রােগ্রামের সাহায্য নিয়ে থাকে। 

কম্পিউটারের ব্যবহার : কম্পিউটার যন্ত্রটি গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে তৈরি হলেও আজকের দিনে তাকে কাজে লাগানাে হচ্ছে না সেভাবে। কম্পিউটার এখন প্রযুক্তি বিদ্যা, মহাকাশ বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। কোনাে ক্ষেত্রেই কম্পিউটার আজ পিছিয়ে নেই। এখন খেলাধুলা, চিত্তবিনােদন সবখানেই কম্পিউটার কাজ করছে। পরিকল্পনা তৈরি, প্রকল্প বিশ্লেষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণের ডাটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন, আর্থনীতিক, সামাজিক, কারিগরি, পুস্তক ও পত্র পত্রিকা প্রকাশনা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ইন্টারনেট, শিল্প বাণিজ্য সংক্রান্ত নানান কাজেই কম্পিউটার সহায়তা করে আসছে। 

বাংলাদেশে কম্পিউটার : বাংলাদেশে কম্পিউটার এসেছে আশির দশকে। বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে এর আগমন ঘটলেও বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়ে অনেক অফিস, আদালত, কলকারখানায় নিজ আসন করে নিয়েছে। মুদ্রণ শিল্পে কম্পিউটার এক অসাধারণ সাফল্য লাভ করতে পেরেছে। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার মানুষের বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মধ্যে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধনে অগ্রসর হতে পেরেছে। একে আমাদের জাতির জন্য আরও এগিয়ে নিতে হবে। সারা জগত আজ দ্রুত অগ্রগতিতে আছে। আমাদের অশিক্ষা, দরিদ্রতা, অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠে আগামী দিনগুলােকে সগৌরবে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা একান্ত দরকার। তাই কম্পিউটারকে সে অগ্রযাত্রায় সাথী করে নিতে পারলেই আমাদের দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ হবে সুনিশ্চিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url