অনুচ্ছেদ রচনা, এর প্রয়োজনীয়তা , অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম

অনুচ্ছেদ রচনা, এর প্রয়োজনীয়তা , অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম
অনুচ্ছেদ রচনা, এর প্রয়োজনীয়তা , অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম 

অনুচ্ছেদ রচনা 

‘অনুচ্ছেদ' একটি বাংলা শব্দ। শব্দটি শিক্ষিতমহলে বহুল প্রচলিত। মূলত ইংরেজি Paragraph-এর বাংলা পারিভাষিক শব্দ অনুচ্ছেদ। অনুচ্ছেদ লেখার মাধ্যমে লেখক তার চিন্তাশক্তি ও রচনাশৈলীর উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। কম কথায় ও কম লেখায় একটি বিষয়কে অনুচ্ছেদ আকারে উপস্থাপন করতে পারা অত্যন্ত কুশলী কাজ হিসেবে পরিচিত। ক্ষুদ্রই সুন্দর এবং সহজবােধ্যতাই আকর্ষণ। এ বাক্যকে প্রতিপাদ্য ধরে অনুচ্ছেদ রচনা করা হলে, সে অনুচ্ছেদটি পূর্ণ সার্থকতা পায়। প্রসঙ্গত, একটি কেন্দ্রীয় বা মূল ধারণ একটি অনুচ্ছেদের মধ্যেই শেষ করা বাঞ্ছনীয় । অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যটিই মূলত তার সূচনা নির্দেশ করে। তাই প্রথম বাক্যটি পড়ে পাঠক যেন আকৃষ্ট হয় সেদিকে লক্ষ রাখা আবশ্যক। অনুচ্ছেদের পরিধি কত বড়াে হবে সে সম্পর্কে কোনাে সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই । তবে অনুচ্ছেদের কেন্দ্রীয় বা মূল ধারণাকে প্রয়ােজনীয় যত কমসংখ্যক বাক্যে উপস্থাপন করা যায় ততই ভালাে।

অনুচ্ছেদের সংজ্ঞার্থ 

অনুচ্ছেদ অর্থ হলাে ছােটো আকারের গদ্য রচনা। কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়কে শিরােনাম করে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ অথচ অপেক্ষাকৃত | ক্ষুদ্রায়তনে যে রচনা চয়ন করা হয় তাকে অনুচ্ছেদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, একটি মূল বক্তব্যকে সম্প্রসারিত করে লেখার উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরস্পর সম্পর্কিত বাক্যের সমষ্টি ঘটানােকে অনুচ্ছেদ বলা হয়। বস্তুত, অল্প সময়ে কোনাে নির্দিষ্ট বিষয়ে পরিপূর্ণ | ও বস্তুনিষ্ঠ আলােচনা করতে হয় বলেই অনুচ্ছেদ আকারে ছােটো হয় । কিন্তু ভাব, বর্ণনা ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে এটি একটি পরিপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ রচনা। এটি একটি চিন্তামূলক উৎকৃষ্ট শিল্পকর্মও বটে। | একটি আদর্শ অনুচ্ছেদে যথাসম্ভব অল্পকথায় বক্তব্যকে পরিস্ফুটনের প্রয়াস থাকে। এ প্রয়াসকে সার্থকভাবে প্রতিফলিত করার | যােগ্যতাই অনুচ্ছেদ রচনার সাফল্য নির্ধারণ করে দেয়। একটি যথার্থ ও মানসম্মত অনুচ্ছেদে নিমােক্ত চারটি বিষয় থাকবে । যথা :

১. অনুচ্ছেদের শিরােনাম 
২. সূচনাপর্ব 
৩. মূলবক্তব্য 
৪. সমাপনী বক্তব্য বা উপসংহার

অনুচ্ছেদ রচনার কৌশল

অনুচ্ছেদে স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। কেননা আয়তনের দিক দিয়ে অনুচ্ছেদ সংক্ষিপ্ত হলেও ছােটো আয়তনের মধ্য দিয়েই অনুচ্ছেদকে পরিপূর্ণ হতে হয়। এক্ষেত্রে অনুচ্ছেদের দায়িত্ব অনেকটা খুদেগল্পের মতাে। খুদেগল্পতে যেমন বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গভীরতা থাকে। তেমনি অনুচ্ছেদের ক্ষুদ্র আয়তনের ক্ষেত্রে মূল বিষয়কে সম্পূর্ণ করে প্রকাশ করতে হয়। অনুচ্ছেদ রচনার ক্ষেত্রে যে বিষয় মাথায় রাখা জরুরি তা হলাে যতদূর সম্ভব উপমাবহুল বা অলংকারপূর্ণ ভাষা বর্জন করা। কেননা ছােটো আয়তনের মধ্যে ভাষার বাহুল্য অনুচ্ছেদ রচনায় যেমন বাধাগ্রস্ত হয় তেমনি পাঠকের কাছেও তা হয়ে উঠতে পারে দুর্বোধ্য। সুতরাং অনুচ্ছেদের ভাষা হবে প্রাঞ্জল | এবং অহেতুক অলংকার বিবর্জিত।

অনুচ্ছেদের শ্রেণিবিভাগ 

প্রধানত অনুচ্ছেদ বস্তুনিষ্ঠ ও ব্যক্তিনিষ্ঠ- এই দুই শ্রেণিতে প্রবন্ধকে ভাগ করা হয়। অনুচ্ছেদ যেহেতু প্রবন্ধেরই সংক্ষিপ্ত রূপ, সেহেত অনুচ্ছেদকেও প্রাথমিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

১. বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ
২. ব্যক্তিনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ 

বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদে প্রধানত বিষয়বস্তুর প্রাধান্য থাকে। এক্ষেত্রে রচয়িতার মৌলিক সৃজনশৈলী, অনন্যসাধারণ চিন্তাশীলতা, পাণ্ডিত্য ও। গভার জ্ঞান প্রকাশিত হয়। তবে ব্যক্তিগত অনুচ্ছেদে লেখক আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে পাঠক-হৃদয়ের সাথে তন্ময় হয়ে যান । বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদের বিষয়-বৈচিত্র্যে বিশেষ করে সমকালীন জীবন, চলমান পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জাতীয় সমস্যাবলি, আর্থসামাজিক অবস্থা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা, উপদেশ ও নীতিকথা প্রাধান্য পেয়ে থাকে ।

অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা

মননশীল ও সৃজনশীল রচনার একটি সংক্ষিপ্ত রূপ হলাে অনুচ্ছেদ। ক্ষুদ্রায়তনেই অনুচ্ছেদের ভাব, ভাষা ও বিষয়ের বিস্তৃতি । এক্ষেত্রে রচয়িতার দায়িত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প কথায় একটি সম্পূর্ণ ভাবার্থকে প্রকাশ করতে গিয়ে লেখকের মুনশিয়ানা থাকতে হয় অনেক বেশি। স্বল্প কথায় পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে বলে অনুচ্ছেদকে বলা যায় একটি উৎকৃষ্ট শিল্পকর্ম। সমকালীন, চলমান, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সমস্যা প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়কে লেখকের চিন্তাশীলতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে সার্থক রূপে প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। বক্তব্যকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ রচনার বাস্তব ধারণা থাকা একান্ত প্রয়ােজন । যেকোনাে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ রচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে কাজটি সহজ হয়ে যায় । অনুচ্ছেদে মূল কথাগুলাে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত করা হয় বলে সবার কাছে তা গ্রহণযােগ্যতা পায়। তাই সার্থক অনুচ্ছেদ রচনার জন্য অনুচ্ছেদ রচনার কৌশল জানার প্রয়ােজনীয়তা অনেক।

অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম 

১. ক্ষুদ্রই সুন্দর এবং সহজবােধ্যতাই আকর্ষণ। এটিই হলাে অনুচ্ছেদ রচনার মূল প্রতিপাদ্য। 
২. অনুচ্ছেদ হবে ছােটো। এখানে বর্ণনা থাকবে, তবে অনাবশ্যক কোনাে শব্দ থাকতে পারবে না। 
৩. অনুচ্ছেদ কেবল একটি প্যারাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি অনাবশ্যক দীর্ঘ হবে না। 
৪. অনুচ্ছেদের শুরুতে শিরােনাম দিয়ে একটি প্যারার মধ্যে সূচনা, মূলবক্তব্য ও মন্তব্যকে উপস্থাপন করতে হয় । 
৫. অনুচ্ছেদে মূল ভাবের প্রকাশ হবে সংক্ষিপ্ত ।
৬. অনুচ্ছেদের ভাষা হবে সহজ-সরল । 
৭. অনুচ্ছেদে কোনাে উপমা বা আলংকারিক ভাষা প্রয়ােগ করা সমীচীন নয়। তাহলে অনুচ্ছেদের সহজবােধ্যতায় ভাটা পড়বে। 
৮. অনুচ্ছেদের বক্তব্য স্পষ্ট এবং ভাষা প্রাঞ্জল হওয়া আবশ্যক। 
৯. বাক্যের মধ্যে অর্থগত সংগতি থাকতে হবে । 
১০. লেখা শুরু করার আগে অনুচ্ছেদের বিষয় সম্পর্কে ভালােভাবে চিন্তা করে নিতে হবে। 
১১. অনুচ্ছেদে সাধু ও চলিত ভাষা একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না। 
১২. অনুচ্ছেদ হবে ছােটো ও স্বল্পায়তনের, কিন্তু বক্তব্য হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url