শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর
শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর |
শীতের কোনো এক সকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
একটি শীতের সকাল
সেবার বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত হলো শীতের ছুটিতে সকলে মিলে অমিতের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাব । আহ্! গ্রামের বাড়ি শীত সকাল উপভোগ করার মজাই আলাদা । যে কথা সে কাজ । একদিন আমরা তিন বন্ধু মিলে সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বন্ধু অমিতের গ্রামের বাড়ি বরিশালের উদ্দেশে রওনা দিলাম । অমিতের বাড়ি পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে গেল । চারদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার এবং উত্তুরে হিমেল হাওয়াযুক্ত প্রবল শীতে আমরা জমে গেলাম । অমিতের পরিবার আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা ঘুমোতে গেলাম ।
সকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দে আমাদের ঘুম ভাঙল । তবে প্রচন্ড ঠান্ডায় লেপের ভেতর থেকে বের হতে পারলাম না । কিন্তু যখন পূবের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ গেল তখন এক অপরূপ দৃশ্য দেখতে পেলাম । গাছপালাঘেরা বাড়িটি যেন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে । যতদূর দৃষ্টি যায় ধূসর-শুভ্র কুয়াশা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না । কিন্তু তার মধ্য দিয়ে সূর্যের মিষ্টি হাসির আলোক ছটায় শিশির-সিক্ত গাচের পাতা ঝলমল করছে । আমি শীত সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিছানা ছেড়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম । অদূর মাঠের পানে তাকাতেই দেখি ঘাসের শিষে জমে থাকা শিশির বিন্দু সূর্যের আলোয় মুক্তোর মতো জ্বল জ্বল করছে । বাহ্! কী চমৎকার দৃশ্য— চোখ ফেরাতে মন চায় না । হঠাৎ খেজুরের কাঁচা রসের মিঠে গন্ধ নাকে এলো । পেছনে ফিরে দেখি শিউলি হাঁড়ি ভর্তি রস এনে উঠোনে জমা করেছে । ইতোমধ্যে সমরেশ উঠে আমার কাছে এসে দাঁড়াল । শীতে ওকে কাঁপতে দেখে অমিত বলল, নে কাঁচা খেজুরের রস খা শীত চলে যাবে।' রস এত ঠান্ডা যে মুখে দিতেই দাঁত শিরশির করে উঠল । রস খাওয়ার পর ঠাণ্ডার ঝাঁকুনিতে আমাদের দাঁতে দাঁতে করতাল বাজতে শুরু হলো । তা নিয়ে হাসির ধুম পড়ে গেল ।
সকালে অমিতের মা আমাদের নানা প্রকারের পিঠা খেতে দিলেন । আহ্! মিষ্টি রোদে স্নাত হয়ে সে কি অমৃতই খেলাম! ভাঁপা, চিতই, পাটি-সাপ্টা, দুধ-পুলি প্রভৃতি পিঠা দিয়ে আমরা উদরপূর্তি নাস্তা করলাম । শীত সকালে হরেক রকমের পিঠার বিচিত্র স্বাদ আর সেই সঙ্গে একজন মমতাময়ী পল্লিমাতার সস্নেহ আপ্যায়নে আমি যারপরনাই মুগ্ধ হলাম । শীত সকাল উপভোগের এমন মজাদার অভিজ্ঞতার কথা আমার স্মৃতিতে আমৃত্যু অম্লান হয়ে থাকবে ।