বাংলা রচনা : বাংলা সাহিত্যে একুশের প্রভাব
[ সংকেত: ভূমিকা; একুশের প্রেক্ষাপট; সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে একুশ; একুশ ও আমাদের সাহিত্য; বাংলা সাহিত্যে একুশের অবদান; উপসংহার। ]
ভূমিকা : একুশ আমাদের অহংকার। একুশের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলন জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন, যা অনাগত কালে ও যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা দান করবে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্যে চেতনার ফসল হিসেবে বিরাজ করছে। মায়ের মুখের ভাষা রক্ষার্থে যে সংগ্রাম হয়েছিল, যত রক্ত ঝরেছিল তা বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রকে করেছে সমৃদ্ধ। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার মানুষকে দিয়েছে। কথা বলার অধিকার ও সাহিত্য সৃষ্টির স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
একুশের প্রেক্ষাপট : ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস একদিকে যেমন আনন্দের তেমনি অন্যদিকে বেদনার। ১৯৪৭ সালে এ উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা বিদায় নিলে শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর অমানবিক অত্যাচার । পাকিস্তানিরা এদেশকে শােষণ করার জন্য প্রথমে বাঙালির প্রাণপ্রিয় মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছে। তারা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। কিন্তু বাঙালি তা মেনে নিতে পারেনি। গড়ে তুলেছে তীব্র প্রতিবাদ। ক্রমে ক্রমে এ আন্দোলন বাড়তে থাকে এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এক প্রবল বিস্ফোরণে পরিণত হয়। এ আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর ও আরও অনেকে জীবন দিয়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করার ও ভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াস চালিয়েছেন। এই আন্দোলনের ফলে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একুশ উন্নীত হয় এক স্বতন্ত্র মর্যাদায়। সেই থেকে একুশ হয়ে ওঠে সংগ্রামের উৎস, চেতনার অধ্যায় । মহান একুশ শিখিয়েছে জাতীয় স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে। এমনকি একুশের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে ও অধিকার রক্ষা করে মাথা উচু করে বাঁচার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে শিখেছে। এক কথায় বলা যায়, একুশই বাংলার সকল আন্দোলনের পেছনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে একুশ : একুশ বাংলা সাহিত্য-অঙ্গনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ভাষার জন্য যে জাতি প্রাণ দিয়েছে, তার ইতিহাস বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে লেখা আছে। মায়ের মুখের ভাষা রক্ষায় বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্তে পিচঢালা কালাে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। তাদের এ আত্মত্যাগের ফসল আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। দেশ, দেশের মানুষ বা মাতৃভাষার জন্য এ আত্মত্যাগ পৃথিবীর অন্য কোনাে দেশের ইতিহাসে নেই। তাই একুশ জড়িয়ে আছে আমাদের সামগ্রিক ও জাতীয় চেতনায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কবি-লেখকগণ তাদের সাহিত্যের মুখ্য উপকরণ হিসেবে একুশকে গ্রহণ করেছেন। আর সেসব মনীষীরা হলেন- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন আজাদ, শওকত ওসমান, কবি শামসুর রাহমান প্রমুখ। একুশ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- 'মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি প্রত্যেক জাতির কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।' তিনি আরও বলেছেন, বাঙালির প্রাণের দাবি, মনের দাবি বাংলা ভাষা। এ ভাষায় তাদের কথা বলতে না দিলে তারা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবে।'
মােদের ভাষার প্রাণ
একুশ সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা সাহিত্যে একুশের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।
বায়ান্নর একুশে ফেরুয়ারিতে মাতভাষার জন্য যেসব তরুণ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিল, স্বাধীনতা উত্তরকালেও সে মাতৃভাষা বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের শিরায় শিরায় প্রবহমান। শামসুর রাহমান, মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সিকান্দার আবু জাফর, মুনীর চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ-কাল ও সমাজের সমকালান আবহে বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সিকান্দার আবু জাফর তার সংগ্রাম চলবেই কবিতায় লিখেছেন—
কবির এ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর বিরুদ্ধে, নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। একুশ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম কবিতা লেখেন কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী। তাঁর রচিত কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতাটি একুশের অন্যতম সেরা কবিতা। স্বাধীনতা তুমি' কবিতায়ও কবি শামসুর রাহমান একুশের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি লিখেছেন—
স্বাধীনতা তুমি
ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রখ্যাত নাট্যকার মুনীর চৌধুরী লিখেছেন ‘কবর’ নাটক । একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- জহির রায়হানের 'আরেক ফাল্গুন', শওকত ওসমানের আর্তনাদ', সেলিনা হােসেনের নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি। একুশ নিয়ে। নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া' এবং 'Let there be Light' । এছাড়াও একুশ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক ছােটোগল্প ।
বাংলা সাহিত্যে একুশের অবদান : একুশের চেতনা দেশের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিদদের সাহিত্য রচনা করার প্রেরণা যুগিয়েছে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃত হওয়ার পর বাংলা ভাষার পঠন-পাঠন ও চর্চার প্রতি আগ্রহ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। সেই সাথে শিল্পী ও সাহিত্যিকগণ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গােষ্ঠীর উদ্ভব, নানা পত্র-পত্রিকার জন্ম, গল্প-কবিতা, প্রবন্ধ উপন্যাস-নাটকে স্বাধিকার অর্জনে দীপ্ত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাই প্রখ্যাত সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী প্রমুখ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে লেখনী ধারণ করায় আজ নতুন প্রজন্ম তা সঠিকভাবে জানতে পারছে। এজন্য জাতি তাদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বাংলার তেজোময় সাহিত্যিকবৃন্দ তাঁদের সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম দিয়ে জাতির বিবেককে বারবার নাড়া দিয়েছেন। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলনের অতীত স্মৃতিকে অধিকতর উজ্জ্বল করে তুলেছেন কবি শামসুর রাহমান, শওকত ওসমান, ড. নীলিমা ইব্রাহীম, হুমায়ুন আজাদ, আল-মাহমুদ, জাহানারা আরজু, আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ সাহিত্যিক । এদেশের সাহিত্যিকগণ একুশের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে বাংলা সাহিত্যের পরিধিকে বর্ধিত করেছেন।
ভূমিকা : একুশ আমাদের অহংকার। একুশের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারি তথা ভাষা আন্দোলন জাতীয় জীবনে একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন, যা অনাগত কালে ও যুগ যুগ ধরে বাঙালি জাতিকে প্রেরণা দান করবে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্যে চেতনার ফসল হিসেবে বিরাজ করছে। মায়ের মুখের ভাষা রক্ষার্থে যে সংগ্রাম হয়েছিল, যত রক্ত ঝরেছিল তা বাংলা সাহিত্যে স্থান পেয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রকে করেছে সমৃদ্ধ। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলার মানুষকে দিয়েছে। কথা বলার অধিকার ও সাহিত্য সৃষ্টির স্বাধীনতা। বাঙালি জাতির জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
একুশের প্রেক্ষাপট : ভাষা আন্দোলন ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হয়ে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস একদিকে যেমন আনন্দের তেমনি অন্যদিকে বেদনার। ১৯৪৭ সালে এ উপমহাদেশ থেকে ইংরেজরা বিদায় নিলে শুরু হয় পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর অমানবিক অত্যাচার । পাকিস্তানিরা এদেশকে শােষণ করার জন্য প্রথমে বাঙালির প্রাণপ্রিয় মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছে। তারা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। কিন্তু বাঙালি তা মেনে নিতে পারেনি। গড়ে তুলেছে তীব্র প্রতিবাদ। ক্রমে ক্রমে এ আন্দোলন বাড়তে থাকে এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এক প্রবল বিস্ফোরণে পরিণত হয়। এ আন্দোলনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর ও আরও অনেকে জীবন দিয়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করার ও ভাষার মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রাখার প্রয়াস চালিয়েছেন। এই আন্দোলনের ফলে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একুশ উন্নীত হয় এক স্বতন্ত্র মর্যাদায়। সেই থেকে একুশ হয়ে ওঠে সংগ্রামের উৎস, চেতনার অধ্যায় । মহান একুশ শিখিয়েছে জাতীয় স্বার্থে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে। এমনকি একুশের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে ও অধিকার রক্ষা করে মাথা উচু করে বাঁচার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে শিখেছে। এক কথায় বলা যায়, একুশই বাংলার সকল আন্দোলনের পেছনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে একুশ : একুশ বাংলা সাহিত্য-অঙ্গনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ভাষার জন্য যে জাতি প্রাণ দিয়েছে, তার ইতিহাস বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি পরতে পরতে লেখা আছে। মায়ের মুখের ভাষা রক্ষায় বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্তে পিচঢালা কালাে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। তাদের এ আত্মত্যাগের ফসল আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। দেশ, দেশের মানুষ বা মাতৃভাষার জন্য এ আত্মত্যাগ পৃথিবীর অন্য কোনাে দেশের ইতিহাসে নেই। তাই একুশ জড়িয়ে আছে আমাদের সামগ্রিক ও জাতীয় চেতনায় সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কবি-লেখকগণ তাদের সাহিত্যের মুখ্য উপকরণ হিসেবে একুশকে গ্রহণ করেছেন। আর সেসব মনীষীরা হলেন- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন আজাদ, শওকত ওসমান, কবি শামসুর রাহমান প্রমুখ। একুশ সম্পর্কে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন- 'মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি প্রত্যেক জাতির কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।' তিনি আরও বলেছেন, বাঙালির প্রাণের দাবি, মনের দাবি বাংলা ভাষা। এ ভাষায় তাদের কথা বলতে না দিলে তারা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হবে।'
মােদের ভাষার প্রাণ
একুশ করেছে দান
একুশ মােদের পাথেয়
একুশকে করাে নাকো হেয় ।
একুশ সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা সাহিত্যে একুশের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে।
একুশ ও আমাদের সাহিত্য : একশের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখা-প্রশাখাই সমদ্ধ হয়েছে। একুশ নিয়ে রাত হয়েছে অসংখ্য কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস, নাটক। এছাড়াও একুশকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে চলচ্চিত্র। কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ একুশকে কেন্দ্র করে লিখেছেন—
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তােমার বন্ধু ভয় কী।
আমরা খাড়া রয়েছি তাে চার কোটি পরিবার।
বায়ান্নর একুশে ফেরুয়ারিতে মাতভাষার জন্য যেসব তরুণ নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছিল, স্বাধীনতা উত্তরকালেও সে মাতৃভাষা বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের শিরায় শিরায় প্রবহমান। শামসুর রাহমান, মােহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সিকান্দার আবু জাফর, মুনীর চৌধুরী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ-কাল ও সমাজের সমকালান আবহে বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন। একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সিকান্দার আবু জাফর তার সংগ্রাম চলবেই কবিতায় লিখেছেন—
জনতার সংগ্রাম চলবেই।
আমাদের সংগ্রাম চলবেই ।
আমাদের সংগ্রাম চলবেই ।
কবির এ সংগ্রাম ছিল পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর বিরুদ্ধে, নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। একুশ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম কবিতা লেখেন কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী। তাঁর রচিত কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' কবিতাটি একুশের অন্যতম সেরা কবিতা। স্বাধীনতা তুমি' কবিতায়ও কবি শামসুর রাহমান একুশের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি লিখেছেন—
স্বাধীনতা তুমি
শহিদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রখ্যাত নাট্যকার মুনীর চৌধুরী লিখেছেন ‘কবর’ নাটক । একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রচিত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে- জহির রায়হানের 'আরেক ফাল্গুন', শওকত ওসমানের আর্তনাদ', সেলিনা হােসেনের নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি। একুশ নিয়ে। নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া' এবং 'Let there be Light' । এছাড়াও একুশ নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক ছােটোগল্প ।
বাংলা সাহিত্যে একুশের অবদান : একুশের চেতনা দেশের সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিবিদদের সাহিত্য রচনা করার প্রেরণা যুগিয়েছে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃত হওয়ার পর বাংলা ভাষার পঠন-পাঠন ও চর্চার প্রতি আগ্রহ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। সেই সাথে শিল্পী ও সাহিত্যিকগণ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গােষ্ঠীর উদ্ভব, নানা পত্র-পত্রিকার জন্ম, গল্প-কবিতা, প্রবন্ধ উপন্যাস-নাটকে স্বাধিকার অর্জনে দীপ্ত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাই প্রখ্যাত সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, কবি মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী প্রমুখ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে লেখনী ধারণ করায় আজ নতুন প্রজন্ম তা সঠিকভাবে জানতে পারছে। এজন্য জাতি তাদের চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বাংলার তেজোময় সাহিত্যিকবৃন্দ তাঁদের সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম দিয়ে জাতির বিবেককে বারবার নাড়া দিয়েছেন। বর্তমান বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলনের অতীত স্মৃতিকে অধিকতর উজ্জ্বল করে তুলেছেন কবি শামসুর রাহমান, শওকত ওসমান, ড. নীলিমা ইব্রাহীম, হুমায়ুন আজাদ, আল-মাহমুদ, জাহানারা আরজু, আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ সাহিত্যিক । এদেশের সাহিত্যিকগণ একুশের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে বাংলা সাহিত্যের পরিধিকে বর্ধিত করেছেন।
উপসংহার : ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি চির অম্লান ঘটনা। একুশের চেতনা বা প্রভাব আমাদের সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ। একুশ কেন্দ্রিক সাহিত্য আমাদের এনে দিয়েছে আত্মপরিচয়ের প্রেরণা ও আত্মনির্মাণের যােজনা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে একুশের তাৎপর্য সঠিকভাবে তুলে ধরার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আব্দুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি